ঢাকা , মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫ , ১৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ভেসে যাচ্ছে জিও ব্যাগও

পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে স্থানীয়রা

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৩:১৮:৪৫ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৮-০৭-২০২৫ ০৩:১৮:৪৫ অপরাহ্ন
পদ্মার ভাঙনে আতঙ্কে স্থানীয়রা সংবাদচিত্র: সংগৃহীত
পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সৃষ্ট স্রোত ও ঢেউয়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ও গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্থানে। গত এক সপ্তাহের ভাঙনে নদীতে বিলীন হয়েছে রাজবাড়ী সদর উপজেলার মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুরের মধ্য ও পূর্বপাড়ার প্রায় ৫০০ মিটারসহ গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকার অন্তত ২০ থেকে ৩০ বিঘা ফসলি জমি। বর্তমানে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার স্কুল, মসজিদ, বাজার, বসতবাড়ি, গ্রামীণ সড়ক, কবরস্থানসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি। ফলে ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছেন পদ্মা তীরবর্তী বাসিন্দাসহ জমির মালিকরা। এদিকে ভাঙন রোধে মিজানপুর মহাদেবপুরের পূর্ব ও মধ্যপাড়ায় জরুরি আপদকালীন বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত গোয়ালন্দের দেবগ্রামের মুন্সিবাজার ভাঙন কবলিত এলাকায় নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিজানপুর রাজবাড়ী জেলার সর্ববৃহৎ এবং জেলা শহরতলীর একটি ইউনিয়ন। প্রতিবছর পদ্মার ভাঙনে এই ইউনিয়নের শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়। বর্তমানে ইউনিয়নটির মহাদেবপুর ও রামচন্দ্রপুরের প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকার ফসলি জমি, স্কুল, গ্রামীণ সড়ক, মসজিদ ও বসতবাড়ি ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। এসব এলাকায় কয়েক বছর আগে ডাম্পিং করা বালুভর্তি জিও ব্যাগ বিভিন্ন স্থানে পানির তীব্র স্রোতে ধসে গেছে। ফলে এবার নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। কয়েক বছর আগে মহাদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দুইটি ভবনের একটি ভবন নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন ঝুঁকিতে রয়েছে বিদ্যালয়টির মূল ভবনসহ শহীদ মিনার, বসতবাড়ি, মসজিদ, কবরস্থান ও গ্রামীণ সড়ক। এদিকে গতবছর জেলার গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকায় তীব্র নদীভাঙনে বেশ কিছু বসতবাড়িসহ ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। তবে অল্পকিছু জিও ব্যাগ ফেলা ছাড়া স্থায়ী কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি। ফলে এবার আবারো ভাঙন দেখা দিয়েছে মুন্সিবাজার এলাকাসহ গোয়ালন্দের নদী তীরবর্তী কয়েক কিলোমিটার এলাক জুড়ে। ফলে ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে এসব এলাকার বসতবাড়ি, স্কুল, মসজিদ, বাজার, গ্রামীণ সড়ক, কবরস্থানসহ ফসলি জমি।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, পদ্মা নদীর রাজবাড়ী অংশে দৈর্ঘ্য ৫৭ কিলোমিটার। সাম্প্রতিক সময়ে রাজবাড়ী সদরের মিজানপুরের মহাদেবপুরের ৩৫০ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত হয়েছে এবং রামচন্দ্রপুরে নদীর ঢেউয়ে ১৫০ মিটার এলাকায় পূর্বের ডাম্পিং করা টিউব ও জিও ব্যাগ ধসে গেছে। এছাড়া গোয়ালন্দের দেবগ্রাম ইউনিয়নের কাওয়ালজানি মুন্সিবাজার এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩শ মিটার ফসলি জমি ভাঙনে ক্ষতি হয়েছে।রাজবাড়ী সদরের মহাদেবপুর মধ্যপাড়ার জামান মন্ডল, ওয়াজ মন্ডলসহ কয়েকজন বলেন, আমাদের এই মহাদেপুর এলাকা আগে অনেক বড় ছিল। পাশে স্কুল, মসজিদ, মাদরাসা, বাজারসহ সব ছিল। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে এখন এলাকা আস্তে আস্তে ছোট হয়ে আসছে। নদীর পাড়ে যাদের বাড়ি-ঘর আছে তারা সবসময় ভয়ে থাকি। একেতো নদীভাঙন আতঙ্ক, তার ওপর আবার ডাকাতের ভয়। আগে বাড়ি থেকে রাস্তায় যেতে পাঁচ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগতো। কিন্তু এখন ঘরের জানালা খুললেই নদী দেখা যায়। দিন-রাত সবসময় ভাঙন আতঙ্কে থাকতে হয়। আমরা চাই আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে নদীর ঢেউ ও ভাঙন রক্ষা থেকে করা হোক। এখানে ক্ষমতাশীল মানুষ থাকলেও বিগত সরকারের আমলে স্থায়ী কোনো কাজ নেই এবং এখনো কোনো পদক্ষেপ দেখছি না।

ভাঙন আতঙ্কে থাকা জবেদা খাতুন বলেন, আমাদের ঘর নদীর পাড়ে। কয়েক বছর আগে ভাঙনের সময় কিছু বস্তা ফেললেও সেগুলো এখন নদীতে চলে যাচ্ছে। নতুন করে বস্তাও ফেলা হচ্ছে না। যাদের ক্ষমতা আছে তাদের বাড়ির সামনে দিয়ে বস্তা ফেলা হচ্ছে। আমরা গরিব মানুষ, এই বাড়ি ভেঙে গেলে আমাদের জমি কিনে বাড়ি করার ক্ষমতাও নেই। তাই দিনরাত এখন নদীভাঙন আতঙ্কে কাটছে।গোয়ালন্দের দেবগ্রাম মুন্সিপাড়ার খবির সরদার বলেন, আমরা চাল, গম কিছু চাই না, চাই শুধু নদী শাসন। নদী বেঁধে দিলে আমরা কাজকর্ম করে খেতে পারবো। আজ প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নদী ভাঙছে। অনেকেই আসে, দেখে কিন্তু কেউ ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ভাঙন শেষে সবাই এসে বলবে এটা-ওটা করা লাগবে এবং কিছু বস্তা ফেলে চলে যাবে। এতে ভাঙন থামে না। এবার যেভাবে ভাঙছে তাতে আমাদের বাড়ি-ঘর নদীতে বিলীন হতে বেশি সময় লাগবে না। এবার আমার দুই বিঘা পাটসহ এই মুন্সিপাড়ার প্রায় ৩০ বিঘার বেশি জমি নদীতে চলে গেছে। বেশির ভাগ জমিতে ধান ও পাট ছিল।

রাজবাড়ী উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এম এ শামীম বলেন, বর্তমানে রাজবাড়ী সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের মহাদেবপুর পূর্ব ও মধ্যপাড়াসহ রামচন্দ্রপুর এবং গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের মুন্সিপাড়া এলাকায় মোট ৬০০ মিটার এলাকা ভাঙন কবলিত হয়েছে। এরইমধ্যে জরুরি আপদকালীন কাজ হিসেবে মহাদেবপুর মধ্য ও পূর্ব পাড়ায় কাজ চলমান রয়েছে এবং গোয়ালন্দ দেবগ্রামের মুন্সিপাড়ায় ভাঙন রোধে দ্রুত কাজ শুরু হবে। আশা করছি এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে ভাঙন রোধ হবে।

বাংলাস্কুপ/প্রতিনিধি/এনআইএন
 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স


এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ